খুব ছোট বেলা থেকেই আমাদের ভিতরে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরী করে দেয়া হয়। আমাদের বাবা মা, স্কুল কলেজের শিক্ষক, এর পরে চাকুরীক্ষেত্রে, সংসারে, বন্ধুবান্ধব - কোথায় নেই এই প্রতিযোগিতা! জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়তই আপনি প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হবে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা কি সুস্থ? আমাদের কি এই প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া উচিত? ঠিক কার কার সাথে আমরা প্রতিযোগীতায় নামব? ভেবে দেখেছেন কখনো?
এই সব গুলোর উত্তর একটা মাত্র পোষ্টে দেয়া সম্ভব না। তবে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে চেষ্টা করা যেতে পারে। শেষ প্রশ্ন থেকে শুরু করব।
আমাদের এই সব প্রতিযোগিতাই যে সুস্থ তা নয়, তবে কিছু কিছু প্রতিযোগীতা সুস্থ। একই কথা অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেও। আমরা অংশগ্রহন করব তবে কার সাথে সেটা ভেবে ঠিক করে নেয়ার ব্যাপার আছে। এই শেষ প্রশ্নটা থেকেই চিন্তাটা শুরু করতে হবে।
মনে করুন, আপনি আপনি গড়পড়তা ছাত্র/ছাত্রী। আপনার রেজাল্ট মোটামোটি রকম ভাল। ফলে আপনার অভিভাবকও মোটামোটি রকম সন্তুষ্ট! তো তারা কি করলেন আপনাকে চাপ দিলেন পড়াশোনায় মনোযোগী হতে। আর আপনি কি করলেন, পড়ার সময় বাড়িয়ে দিলেন, নোটস, হোমওয়ার্ক, কোচিং শুরু করলেন সিরিয়াস হয়ে। শুরু হয়ে গেল আপনার প্রতিযোগীতা। রোল নং ছিল ১০। এর আগের ৯ জনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবার প্রতিযোগীতা। আপনার চেষ্টা আপনাকে এগিয়ে নিয়ে গেল। এক সময় প্রথম হলেন। আপনি আপনার প্রতিযোগীতায় টিকে গেছেন!
শিক্ষা জীবন তো শেষ হলো। এবার জব খুঁজতে হবে। শুরু হল চাকুরী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগীতা। জব সাইট, সার্কুলার, রেফারেন্সে এপ্লাই, সিভি তৈরী, প্রিপারেশন, লিংক লবিং, অনেক কিছু করে পেয়ে গেলেন আপনার কাংখিত চাকরী। টিকে গেলেন এবারো।
শুধু হলো চাকুরী জীবন। এর পরে নামলেন সংসারে। অমুকে ঘরে এই আছে, তমুক এই করে, উনি এটা কিনেছেন, তিনি সেখানে ঘুরতে গেছেন। তুলনার শেষ নাই, শেষ নাই চাহিদার, শেষ নেই প্রতিযোগীতারও। আপনি আবার নামলেন, আবার জয়ী হলেন।
এর পরে কি?
মূল চিন্তার জায়গাটা এখানেই। মার্কেটে তো আপনার প্রতিযোগী নেই। আপনি তো প্রথম এর পরে কি? এবার কার সাথে প্রতিযোগীতা করবেন আপনি? তালিকার প্রথমে চলে এসেছেন তো! সামনে তো লক্ষ্য নেই আর! এবার আপনার লক্ষ্যচ্যুত হবার পালা, এবার আপনার কক্ষপথ থেকে ছিটকে সরে আসার সময় হয়েছে! কিন্তু এই যে অবস্থাটা তৈরী হলো, সেটা কে তৈরী করেছে? জ্বি আপনিই। আপনি এমন কাউকে প্রতিযোগী হিসেবে নিয়েছেন যাদের অতিক্রম করা যায়। যার পরে আর লক্ষ্য থাকে না।
এবার ভেবে দেখুন, প্রতিযোগীতাটা যদি নিজের সাথে হতো! প্রতিযোগীতাটা যদি গোড়া থেকেই নিজেকে অতিক্রম করে যাবার হতো? তাহলে কি কি ঘটতো?
সে স্কুলে আপনি প্রথম হয়েছেন, হয়ত তার চেয়ে ভালো কোন স্কুলে আপনি থাকতে পারতেন যেখানের লাস্ট বয় বা লাস্ট গার্ল আপনার স্কুলের ফার্স্ট বয় এর চেয়েও বেশি জানে!
যে চাকুরীতে আপনি ঢুকেছেন, তার চেয়ে ভালো কোথাও আপনি যেতে পারতেন যেখানে আপনি আপনার সম্পূর্ণ পটেনশিয়ালিটিটুকু কাজে লাগাতে পারতেন। নিজেকে আরো দক্ষ ও সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেতেন, হয়ত আরো বড় পরিসরে কাজ করার, বড় কিছু করার সুযোগ আসত জীবনে। হয়ত বা চাকুরী না, নিজের ব্যাবসাই দাঁড় করাতে পারতেন। হয়ত সেটা অনেকের রুটি রিজিক, নির্ভরশীলতার জায়গা হতো।
সংসারে তুলনামূলক প্রতিযোগীতার চেয়ে বরং সুখ আর শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা আর আলোচনার সুযোগটা তৈরী হতো। মোদ্দা কথা, কোয়ালিটি ডীফারেন্স তৈরী হত। আপনি আপনার অবস্থান থেকে সুস্পষ্ট পার্থক্য তৈরী করতে পারতেন।
তাই প্রতিযোগীতাটা অন্যের সাথে না হয়ে নিজের সাথে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
আর সহযোগীতাটা এড়িয়ে না গিয়ে অন্যেকে করাটা বাঞ্ছনীয়।
নিজের সাথে কীভাবে প্রতিযোগীতাটা করা যায় আর কোন এক পোষ্টে তা বলব। আজ এই পর্যন্তই।
ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, ঘরে থেকেই মহামারী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখুন এবং নিজেকে উন্নয়ণের মাধ্যমে মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হোন।