গাঁয়ে মানে না আপনে মোড়ল

গাঁয়ে মানে না আপনে মোড়ল
০৫ এপ্রিল

By born leader বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। আসলেই কি লিডার বা নেতা হয়েই মানুষ জন্মায়! নেতৃত্ব কি মানুষ জন্মসূত্রে পায়? আপনার কি মনে হয়? আসুন জেনে নিই আজকে নেতৃত্বের কিছু দিক।

নেতৃত্ব এমন একটি গুণ যা আপনি চাইলেই চর্চার মাধ্যমে নিজের ভিতর তৈরী করতে পারবেন। leadership quality বা নেতৃত্বের গুণাবলী কেউ কেউ হয়ত জেনেটিক্যালিই পেয়ে যান তবে এটা মূলত একটি চর্চার বিষয়।

নেতৃত্ব কি ?

নেতৃত্ব আসলে একেক জনের জন্য একেক রকম। এর কোন নির্দিষ্ট ফরম্যাট বা ছাঁচ নেই। একে আপনি চাইলেই সজ্ঞায়িত করতে পারবেন না। তবে চাইলেই আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন। নেতৃত্বে বিভিন্ন রকম আছে। সাধারণত নিচের বিষয়গুলো কারো ভিতরে থাকলে তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী আছে বলে ধরে নেয়া হয়!

  1. ১. ভবিষ্যত সম্পর্কে অনুপ্রেরণাদায়ক দূরদৃষ্টিতা বা vision থাকা

২. সকলে সেই vision এর ব্যাপারে অনুপ্রেরণা এবং উদ্দীপণা দিতে পারা
৩. সেই Vision টা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা
৪. এবং এমন একটি দল বা সংগঠন তৈরী করা যায়ে সেই vision কে অর্জন করতে তারা ঐক্যবদ্ধ হন।( * vision এর অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ আছে, কিন্তু vision কে সঠিক ভাবে আসলে vision ই ব্যাখ্যা করতে পারে)

 

একজন নেতা বা লিডার এর মধ্যে কি কি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন-

১. সঠিক উদাহরণ তৈরী করার ক্ষমতা: আমরা বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতার জীবনী যদি পড়ি দেখবেন তারা প্রত্যকেই নিজে তার জীবনে অসংখ্য উদাহরণ তৈরী করে রেখে গেছেন যা সাধারণ মানুষের জন্য অনুসরনীয়। এই উদাহরণগুলোই একজন নেতাকে অন্যের জীবনের জন্য আদর্শ বা রোল মডেল বানিয়ে দেয়। তাই একজন নেতাকে অবশ্যই সঠিক উদাহরণটি তৈরী করতে হবে এবং সকলের সামনে নিয়ে আসতে হবে।

 

২. প্রতিনিয়ত নিজের নেতৃত্বের উন্নয়ণ ঘটানো: শেখার কোন শেষ নাই। একজন নেতাকে অবশ্যই প্রতিনিয়ত তার ব্যাক্তিগত দক্ষতা এবং গুণাবলীর উন্নয়ণ ঘটানোর মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলী ও বৈশিষ্ঠাবলীর উন্নয়ণ ঘটাতে হবে। এবং এসব দক্ষতাই তার নেতৃত্বকে উন্নত করতে কাজে দিবে।

 

৩. দক্ষ কৌশলীঃ একজন নেতাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। বিশেষ করে যদি প্রযুক্তি বা নির্দিষ্ট কোন দক্ষতার প্রশ্ন আসে তাহলে তাকে অবশ্যই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে। তার সব কিছু জানতে হবে এমন কোন কথা নেই, কিন্তু অন্তত তাকে সব কিছু বুঝতে হবে। তাঁকে কোন একটা বিষয়ের সুযোগ সুবিধা এবং সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

 

৪. সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা: এটা সাধারণত সকল নেয়ার কাছেই প্রত্যাশিত যে যেহেতু তিনি সিদ্ধান্ত দেয়ার মত ক্ষমতা ধারণ করেন তাই তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটি নিবেন এবং দ্রুতি সিদ্ধান্তটি নিবেন। এই গুন্টি অর্জন করতে হলে থাকে পরিকল্পণা প্রণয়ণ, সমস্যা খুঁজে বের করা এবং সমস্যা সমাধানের মত কাজগুলোতে পারদর্শী হতে হবে। তা না হলে একটা টিমকে নেতৃত্ব দেয়াটা তার জন্য সময়ের সাথে সাথে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

 

৫. দায়িত্ব দেয়া এবং দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা: সাধারণত একটা সংগঠন যখন কাজ করতে শুরু করে তখন অনেক ধরণের কাজ থাকে এবং তা একজনের পক্ষে যেহেতু করা সম্ভব নয় তাই সকলের মধ্যে ভাগ করে দিতে হয়। সকলকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া বা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষমতাটাও নেতৃত্বের অনেক বড় একটি গুণ। একই সাথে একটি দলের নেতা সেই দলের সকল কার্যক্রমের জন্য দায়ী। কাজ করতে গেলে ভুল ত্রুটি হবে, সেই ভুল গুলোর ধোধারানোর জন্য কিন্তু দলের কর্মীরা একজন লিডারের মুখাপেক্ষী হবেন। তখন তাদের সেটার উপায় বলে দেয়া এবং সেই ভূলের দায় ও কাজের দায়িত্ব নেয়ার মানসিকতাও একজন নেতার ভিতরে থাকা উচিত।

 

৬. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীঃ ইতিবাচক পরিবেশ যে কোন কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা ও প্রডাক্টিভিটিকে বাড়িয়ে তোলে। এটি সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধ্বির একটু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই একজন নেতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমের সেই ধরনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে যাতে তার সংগঠনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সেটার ইতিবাচক একটা প্রভাব সংগঠনে পড়ে।

 

৭. সংগঠনকে তথ্য দিন: অমর্ত্য সেনের একটা কথা আছে - মানুষ দরিদ্র হয় তথ্যের অভাবে। সংগঠনকে বা নিজের টিমকে সাংগঠনিক তথ্যগুলো জানাতে হবে। প্ল্যানিং, আপডেট, কি হতে যাচ্ছে, কি করতে হবে সব তথ্যের সঠিক প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে হবে যাতে টিম স্পিরিট ধরে রাখা যায়।


৮. নিজের দলকে জানা: একজন নেতা যে দল বা সংগঠনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার খোজ খবর তাকে রাখতে হবে। দলের কর্মীদের সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয়। ব্যাক্তিগত যোগাযোগ সংগঠনে নেতৃত্বের ভুমিকায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

 

৯. প্রতিনিধিত্ব: প্রতিনিধিত্ব করতে ভয় পাওয়া যাবে না। সেটা সংগঠনকেই হোক বা কন কর্মীকেই হোক বা কোন দায়িত্বের ব্যাপারেই হোক। দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনে কর্মীদের দায়িত্বও প্রতিনিধি হিসেবে করার মানসিকতা থাকতে হবে।


১০. কাজের বন্টন ও দেখভাল এবং সম্পন্ন করা: একজন লিডারকে এটা নিশ্চিত হতে হবে যে তার সাথে যারা কাজ করছে তারা তাদের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছে, সেটা তারা সঠিক ভাবে পালন করছে এবং সঠিক সহোযোগিতার মাধ্যমের সেটা সম্পন্ন করছে।

 

কর্মীরা যখন কন কাজের ব্যাপারে জানতে চাইবে না নির্দেশনা চাইবে তখন সেটা দেয়া না গেলে তারা মূলত নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়! আর মানুষ মূলত যাকে শ্রদ্ধা করে তার নেতৃত্বে চলতে পছন্দ করে। তাই নেতৃত্ব দেয়ার আগে শ্রদ্ধা অর্জন খুবই জরুরী বিষয়!

শেয়ার করুন