আপনার ছোট ব্যাবসার জন্য কর্মী নিয়োগ দিবেন কীভাবে?

আপনার ছোট ব্যাবসার জন্য কর্মী নিয়োগ দিবেন কীভাবে?
০২ এপ্রিল

চটি সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ - এই প্রবাদ আক্ষরিক অর্থেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযোজ্য! 

ব্যাবসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই করতে হয় তাদের। একা বা সাথে দু'এক জন কর্মী নিয়ে শুরু করা ব্যাবসা গুলো সমূদ্র পার হওয়া ট্রলারের মত যুদ্ধ করে টিকে থাকে সারাটাক্ষণ! যেহেতু একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তার ব্যাবসার সব ধরণের সিদ্ধান্ত নেন তাই কর্মী বাছাই এর কাজটিও তাকেই করতে হয়। সকল ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের জন্য খুব সম্ভবত কর্মী বাছাই করা খুবই কমন একটি সমস্যা। ব্যাবসাটি ছোট হওয়াতে একজন কর্মী বাছাইয়েও ভুল হলেই ধ্বসে যেতে পারে সমস্ত ব্যাবসাটিই। কারন ব্যাবসার আকার ছোট হওয়ায় একজন কর্মীর উপর অনেক কিছুর দায়িত্ব দেয়া থাকে। তাই ছোট ব্যাবসার বা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মী বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং ঝুকিপূর্ন একটি ব্যাপার। আজকে আমরা এই দূরুহ কাজটি কিভাবে করতে হবে বা এর ঝুকি কতটুকু কমিয়ে আনা সম্ভব সেটা নিয়ে কথা বলব। 

যেহেতু আপনার ব্যাবসা আপনার সন্তানের মত এবং এর ভালো খারাপ সব কিছুই আপনি জানেন, তাই কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমত তাদেরকে আপনি বুঝাবেন তারা আসলে কেন আপনার সাথে কাজ করবে? আমরা সবাই টাকার জন্যই কাজ করি। কিন্তু অর্থ উপার্জন একটা গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর হলেও এটাই সবকিছু না। যেহেতু আপনার ব্যাবসাটি ছোট আপনি তাকে বুঝাতে পারেন যে, এখানে অফিস পলিটিক্স এর মত নোংরা জিনিষটি থাকার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। এছাড়া ছোট্ট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের চাকরী করার একটি কষ্টকর দিক হচ্ছে এখানে একজন কর্মীকে একসাথে অনেক কাজ করতে হয় এবং নানাধরনের কাজ করতে হয়। যা বড় প্রতিষ্ঠানে প্রায় হয় না বললেই চলে। এই দূর্বল দিকটিকে আপনি তার সামনে ইতিবাচক দিক হিসেবে উপস্থাপণ করুন। বলুন যেহেতু এটি একটি ছোট ব্যাবসা তাই অনেক ধরনের কাজের দায়িত্ব তার উপর থাকবে, ফলে সে অনেক ধরনের কাজ শেখার সুযোগ পাবে - যা বড় কোম্পানীতে চাকরী করলে পেতো না। এর ফলে সে কাজ শিক্ষে অভিজ্ঞ হবার একটা সুযোগ পাচ্ছে। অভিজ্ঞতা টাকার চেয়ে অনেক মূল্যবান এবং এটা কেউ চাইলেই খুব সহজে অর্জন করতে পারে না। এর ফলে সে পেশাগত জীবনে উন্নতির সুযোগ পাবে। 

মোদ্দা কথা তাকে আপনার বেতন বা টাকা পয়সা ছাড়া অন্যান্য দিকগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে বুঝাতে হবে। আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে টাকা পয়সার ব্যাপার ছাড়া বাকি দিকগুলোর জন্য যেন সে আকর্ষিত হয়। 

দ্বিতীয় যে কাজটি আপনি করতে পারেন তা হচ্ছে বড় বড় জব পোর্টালে চাকুরীর বিজ্ঞাপণ না দিয়ে অন্যভাবে কর্মী খুঁজে বের করেন। বড় জব পোর্টালে সার্কুলার দিলে আপনার কাছে শত শত বা হাজার কাছে সিভিও চলে আসতে পারে। এই সংখ্যাটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দেয়া ছাড়া আর তেমন কোন উপকারে আসনে না। কারণ এই শত শত আবেদনকারীর মধ্যে থেকে একজন বা দুই জনকে বেছে বের করা আপনার জন্য দূরুহ একটি কাজ। এর চেয়ে বরং আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপণ দিন। ফেসবুকে জব পোষ্ট করতে পারেন বা লিংকডইন থেকে একেবারে নির্দিষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন কাউকে বেছে বের করে নিয়ে আসতে পারেন। তার প্রোফাইলই আপনাকে তার সম্পর্কে একেবারে পরিষ্কার ধারণা দিবে। এছাড়াও আরেকটি কাজ করতে পারেন তা হচ্ছে কিছু এজেন্সি আছে যারা আপনার জন্য কর্মী নিয়োগ দিবে। এদের কাছ থেকে কর্মী নেয়ার একটা ভাল দিক হচ্ছে তারা কর্মী নিয়োগের আগেই তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে, তাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে কি না সেটা চেক করে অর্থাৎ তারা আপনাক আপনাকে ট্রায়াল পিরিয়ড দিবে। অর্থাৎ আপনি জবে নেয়ার আগেই তাকে দিয়ে আপনার কাজ হচ্ছে কি না সেটা বুঝে নিতে পারবেন। এমনকি ট্রায়াল পিরিয়ড না থাকলেও একই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোম্পানীতে কাজ করে এসেছে এমন কাউকে তারা বেছে দিতে পারবে, মানে তার টেস্টিমোনিয়াল বা প্রসংসাপত্র দেখেও আপনি একটা সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। 

যখন কাউকে নিয়োগ দিবেন চেষ্টা করবেন সবচেয়ে ভালো যারা তাদের মধ্য থেকে যে সেরা তাকে নিয়োগ দিতে। এমনকি সে যদি আপনার চেয়েও ভালো হয় তবুও। স্টিভ জবস বলে গেছেন 

"A small team of A+ players can run circles around a giant team of B and C players."

সর্বশেষ আপনি যেটা করতে পারেন, কাউকে নিয়োগ দেয়ার আগে আপনি অবশ্যই তার সাথে বসে কথা বলবেন। একটু সময় নিয়ে কথা বলবেন। মনে রাখবেন সবাই ই কথা বলার সুযোগ পেলে বলতে পছন্দ করে। কারন আপনি যখন তাকে কথা বলতে দিবেন তখন সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ন মনে করবে এবং আপনার সাথে নানা বিষয় শেয়ার করতে শুরু করবে। সেই আলোচনা থেকেও আপনি মোটামোটি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে যে কাজের জন্য নিয়োগ দিচ্ছেন সেটাই পরীক্ষামূলক ভাবে করতে দিন। দেখুন আসলেই সে পারে কি না। এই মেথডের উপর আর কোন ভালো মেথড নেই। এটা একেবারে এসিড টেস্ট এর মত একটা ব্যাপার। 

সর্বশেষ একটা উপদেশ "নিজের অনুমান শক্তির উপর আস্থা রাখুন"। 


Trust your hunches. They’re usually based on facts filed away just below the conscious level

- আমেরিকান সাইকোলজিস্ট জয়েস ব্রাদার্স।

শেয়ার করুন